,

সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী মোস্তফা শহীদ আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, একুশে পদক প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ৬ বারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হক মোস্তফা শহীদ আর নেই। (ইন্না…. রাজেউন)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় স্কয়াল হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড তাকে সৃত ঘোষনা করে। সাদা মনের এ মানুষটির মৃত্যুর খবরে নির্বাচনী এলাকা চুনারুঘাট, মাধবপুর সহ সারা জেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই বৃহস্পতিবার ঢাকায় ছুটে যান। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় নিহতের লাশ হবিগঞ্জের বাসায় আনা হবে। সকাল ১১টায় হবিগঞ্জে, দুপুর ২টায় মাধবপুরে, বিকাল ৪ ঘটিকায় চুনারুঘাট এবং সর্বশেষ বিকাল ৫ ঘটিকায় শায়েস্তাগঞ্জে জানাজা শেষে নিজ গ্রাম কুটিরগাওয়ে তাকে দাফন করা হবে বলে মন্ত্রীর সাবেক পি এ আনিসুর রহমান জানিয়েছেন। এর পুর্বে মঙ্গলবার দিনগত রাত সোয়া ১২টার দিকে স্কয়ার হাসপাতালে ৮জনের সমন্বিত চিকিৎসক বোর্ড তাকে ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করে। এনামুল হক মোস্তফা শহীদের ছোট ভাই মঞ্জুরুল হক মাসুদ জানান, মোস্তফা শহীদ দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও ডায়াবেটিকসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোমবার এনামুল হক মোস্তফা শহীদকে স্কয়ার হাসপাতালে রেফার করা হয়। মঙ্গলবার রাতে ৮ জনের সমন্বিত চিকিৎসক বোর্ড তাকে ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করেন। সেখানেই তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তার মৃত্যুতে হবিগঞ্জ জেলা, মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দলের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। শোক প্রকাশ করেছেন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট আবু জাহির এমপি, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান, চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবু তাহের, আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক পিপি এডভোকেট আকবর হোসেন জিতু, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর, মাধবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহ মোঃ মুসলিম, সেক্রেটারি আতিকুর রহমান আতিক, মাধবপুর পৌর মেয়র হীরেন্দ্র লাল সাহা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী পাঠান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ সামাদ সহ বিভিন্ন শ্রেণিল পেশার মানুষ। এক নজরে এনামুল হক মোস্তফা শহীদ: এনামুল হক মোস্তফা শহীদ ১৯৩৮ সালের ২৮ মার্চ হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা ইউনিয়নের কুটিরগাঁও গ্রামে মরহুম ডা. আব্দুল হক ও মরহুমা খুদেজা খাতুনের ঔরসে জনগ্রহণ করেন। তিনি স্থানীয় কুদ্রতিয়া মাদ্রাসায় বাল্যশিক্ষার পাঠ চুকিয়ে ১৯৫২ ইংরেজি সনে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৫৬ সালে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৬ সালে হাইকোর্টে এনরোলমেন্ট লাভ করেন। ১৯৭৪ সালের ৪ মার্চ সিলেটের জালালপুর রাইমাট গ্রামের মিনু মমতাজকে বিয়ে করেন। তিনি ২ ছেলে সন্তানের জনক। সাবেক এ মন্ত্রী একাধারে সফল রাজনীতিক, শিক্ষক, লেখক, সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিক ছিলেন। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৬’র ৬ দফা, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে ছিল তার অসামান্য অবদান। এজন্য তাকে কয়েকবার জেলেও যেতে হয়েছে। তিনি ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সময় হবিগঞ্জ ভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মোস্তফা শহীদ ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের সময় হবিগঞ্জ মহকুমা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নির্বাহী সদস্য ছিলেন। তিনি ভারতে সিএনসি বিশেষ ট্রেনিংয়ে ইয়ুথ ক্যাম্পের পরিচালক এবং বিভিন্ন সেক্টরে সিভিল এয়ারফোর্স উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া ডাকবাংলোয় বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করার সময় আলোচনায় অন্যরকম দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬০ থেকে ৬৮ সাল পর্যন্ত হবিগঞ্জ জে কে অ্যান্ড এইচ কে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গণে ছিলেন দুর্দান্ত অভিনেতা। তখনকার হবিগঞ্জ আর্ট কাউন্সিলের (জেলা শিল্পকলা একাডেমী) সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ১৯৭০ এর প্রাদেশিক নির্বাচন, ১৯৭৩, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ এর জাতীয় নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। লেখক এনামুল হক মোস্তফা শহীদের লেখা ‘খোয়াই নদীর বাঁকে’ বইটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ ছাড়াও তিনি ছিলেন মাসিক অভিযাত্রীর সম্পাদক। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৩ সালের এনামুল হক মোস্তফা শহীদ একুশে পদকে ভূষিত হন। এদিকে তার ক্লিনিক্যালি ডেড এর খবরে চুনারুঘাট ও মাধবপুরে নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আজ সকাল থেকেই উপজেলা পরিষদসহ সব স্থানেই আলোচনা চলছে তার এ ক্লিনিক্যালি ডেড এর খবর। তার ঘনিষ্ট সহচর চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবু তাহের জানান, তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে। পারিবারিক সিদ্ধান্তের পরই তাকে রিলিজ করা হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর